বিক্ষোভকারীদের দমনে নির্যাতন চালাচ্ছে বেলারুশ সরকার - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
বিক্ষোভকারীদের দমনে নির্যাতন চালাচ্ছে বেলারুশ সরকার - Shera TV
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

বিক্ষোভকারীদের দমনে নির্যাতন চালাচ্ছে বেলারুশ সরকার

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে অব্যাহতভাবে চলছে বিক্ষোভ। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে চলা এই বিক্ষোভ দমনে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে দেশটির সরকার।

রোববার (৯ আগস্ট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বেলারুশে। দেশটির নির্বাচনে জয়ী হওয়া আলেকজেন্ডার লুকাশেস্কো গত ২৬ বছর থেকে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৮০ দশমিক ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে দেশটির জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী সভেৎলানা তিখানোভস্কায়া পেয়েছেন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট।

নির্বাচনের এই ফল ঘোষণার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বেলারুশজুড়ে। বিক্ষোভ থেকে গত এক সপ্তাহে আটক করা হয় অন্তত ৭ হাজার মানুষকে। তাদের সঙ্গে আটক হন দেশটির আইনজীবী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক নাতালিয়া ডেনিসোভা। তিন দিন জেলে থাকার পর বের হয়েই আকুতি জানিয়েই তিনি বললেন, এটা পুরো নরক, আমাদের বাঁচান।’

নাতালিয়া ডেনিসোভা নামের ওই আইনজীবীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে নেয়ার পর বেলারুশের বেশিরভাগ মানুষের সাথে যা ঘটেছিলো তার সাথেও তাই ঘটেছে। জেলে তার উপর চরম নির্যাতন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না কিশোর-কিশোরীরাও।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলছে, গ্রেফতার হওয়া অন্যদের বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে ডেনিসোভার বক্তব্যের। পুলিশি হেফাজতে তাদের মারধর এবং নির্যাতন করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে ‘ব্যাপক নির্যাতনের’ খবর পাওয়া গেছে। নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৭ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভ স্বত্বেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন স্বৈরশাসক আলেক্সান্দর লুকাশেস্কোকে সমর্থন দিয়েছেন। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে লুকাশেস্কো সাবেক সোভিয়েত বাইলোরাশিয়া প্রজাতন্ত্রের একজন একনিষ্ঠি সমর্থক ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছিলেন আইনসভার একজন সদস্য হিসেবেও।  তিনিই একমাত্র সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেলারুশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে নানা সমিকরণের মধ্যদিয়ে গেছে রাষ্ট্র বেলারুশ।

স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়ার ইন্দোনে ১৯৯৪ সালে তিনিই দেশটির ক্ষমাতায় আসেন। একইভাবে তিনি ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬টি নির্বাচনে বিজয়ী হন। যদিও এবারের মতো প্রতিবারই নির্বাচনের পর দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছিল। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো সেই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিরোধীদের সমর্থন দিয়ে আসছে।

অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে লুকাশেস্কোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষনা দেন দেশটির জনপ্রিয় নেতা বাঙ্কার ভিক্তর বাবারিকো এবং ইউটিউব ভিডিও নির্মাতা সের্গেই তিখানোভস্কি। কিন্তু প্রার্থিতার ঘোষণা দেয়ার কিছুদিন পর বিভিন্ন অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করে সরকার। দেশজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভের। সের্গেই তিখানোভস্কির স্ত্রী সভেৎলানা তিখানোভস্কায়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এ বছরের মে থেকে নিবাচনের আগ পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছিলো। যাদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিরোধী দলীয় নেত্রী সের্গেই তিখানোভস্কায়া সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।  এর পরই তাকে গ্রেফতার করে ৭ ঘণ্টা আটক রাখা হয়।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয় তাকে মুক্তি দেয়ার পর তিনি দেশ ত্যাগ করেন। লিথুনিয়ায় আশ্রয় নেয়ার পর তিনি সহিংসতা বন্ধে সরকারকে আহ্বান জানান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন নিয়ে এক তরফা এবং ভুল তথ্য প্রকাশের অভিযোগ উঠে। শনিবার সঠিক তথ্য প্রচারের দাবিতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সামনে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। যাতে অংশ নেন সাংবাদিকরাও।

নির্যাতনের শিকার নারী আইনজীবী নাতালিয়া ডেনিসোভা বলেন, আমি আসলে স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়েছিলাম। চেয়ে ছিলাম নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক হতে। নির্বাচন যাতে স্বচ্ছতার সাথে হয় সেচি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমি বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। কত লোক ভোট দিতে আসছে তা নথিভূক্ত করেছি এবং পরে নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্যের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি।আমি সরকারি আইন শতভাগ মেনে চলেছি। তাও আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

আটকের পর প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানী মিনস্কের অকরেস্টিনা কারাগারে। সেখানে কোনো রকম ব্যক্তিগত জিনিস নিতে দেয়া হয়নি। এমনকি দাঁতের ব্রাশও না। বন্দিত্বের তিন দিন তাকে কিছু খেতেও দেয়া হয়নি। তাই তিনি এই কারাগারকে পুরো নরক বলে অভিহিত করেন সাংবাদিকদের কাছে।

জেলের মধ্যে তার সেলে আরেকজন বন্দী অজ্ঞান হয়ে গেলে তিনি সাহায্য চান। কিন্তু কেউ আসেনি। তিনি দরোজায় ধাক্কা মেরে চিৎকার করে সাহায্য চাইলে একজন রক্ষী এসে হাত ভেঙে দেয়ার হুমকি দেয়।  দু ‘বার তাকে নগ্ন অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে এবং অশালীনভাবে তার শরীরে তল্লাশি করা হয়েছে।  এসব নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কিশোর কিশোরীরাও।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়েছে। একই সঙ্গে এই নির্বাচনকে নির্বাচনকে ‘অস্বচ্ছ’ বলে দাবি করেছে।

অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে লুকাশেস্কো ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে তার এই নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। লুকাশেস্কো চেয়েছিলেন রাশিয়া ও পশ্চিমাদের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করতে। কিন্তু রাশিয়া নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দেশটিতে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। আর এত বছর সেটিই করে আসছিলো লুকাশেস্কোর মাধ্যমে। কিন্তু লুকাশেস্কোর নীতিতে পরিবর্তনের কারণে চরমভাবে অবনতি ঘটে রাশিয়া-বেলারুশ সম্পর্কে। ইউরোপের দেশ হওয়া স্বত্বেও বেলারুশের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি বেলারুশ ন্যাটোরও সদস্য নয়।

বেলারুশকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করা অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুরূপ একটি রুশ–বেলারুশীয় ইউনিয়ন গঠনের রুশ প্রস্তাব বেলারুশ প্রত্যাখ্যান করে। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার তীব্র দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও বেলারুশ ইউক্রেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর লুকাশেঙ্কো বেলারুশীয় জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছেন এবং প্রথমবারের মতো রুশ ভাষার পরিবর্তে বেলারুশীয় ভাষায় ভাষণ প্রদান করেছেন।

১৯৯৫ সালে রাশিয়া ও বেলারুশের মধ্যেকার সীমান্ত বিলুপ্ত করা হয়েছিল, কিন্তু লুকাশেঙ্কো ২০১৬–২০১৭ সালে পুনরায় সীমান্ত স্থাপন করেছেন, যার প্রত্যুত্তরে রাশিয়াও অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তদুপরি, সীমান্ত নিয়েও রাশিয়া ও বেলারুশের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। বেলারুশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৪৮% রাশিয়ার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রুশ প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য নিয়েও রাশিয়ার সঙ্গে বেলারুশের বিরোধ দেখা দিয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গেও বেলারুশ সম্প্রতি সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছে। লুকাশেঙ্কোর এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বেলারুশ ‘রাশিয়ার মিত্র রাষ্ট্র’ থেকে ‘রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে সেতুস্বরূপ রাষ্ট্রে’ পরিণত হতে ইচ্ছুক বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ২০১৯ সালের অক্টোবরে বেলারুশে আন্না বোগাচেভা নামক এক রুশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০১৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করার হুমকি দেয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেলারুশীয় সরকার তাকে ছেড়ে দেয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বেলারুশ সফর করেন এবং উভয় পক্ষ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

এসব কারণে দেশটিতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব মরিয়া হয়ে ওঠে। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতায় রাশিয়া লুকাশেস্কোকে সমর্থন দিয়ে আবারো নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে। এতে করে দেশটিতে পশ্চিমা আধিপত্য ভেঙ্গে পড়বে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুনঃরায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ন্যায় সম্রাজ্য গঠনের যে স্বপ্ন দেখছে সেটি পূরণের জন্য হলেও তার হাতে থাকা প্রয়োজন বেলারুশ। এতে করে তিনি ইউরোপের উপর নিয়ন্ত্রণ গড়তে পারবেন। অন্যদিকে বেলারুশের নিয়ন্ত্রণ যদি ইউরোপ বা পশ্চিমা শক্তির হাত চলে যায় তাহলে রাশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকিতে পড়বে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বেলারুশের। দেশটির জনগণ যেমন সরকারের দুর্নীতি আর নির্যাতন মেনে নিতে পারছেন না তেমনি রুশ বা পশ্চিমা আধিপত্যও চান না। কিন্তু দেশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে ন্যস্ত করাও খুব একটা সহজ হবে না সাধারণ মানুষের পক্ষে। তাই কার্যত একটি নরকে পরিণত হয়েছে দেশটি।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360