ডেস্ক রিপোর্ট:
ঋতুচক্রের কারণে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিকভাবেই দেশে শীতকাল থাকে। তাই পুরোনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের আগমন ঘটে থাকে শীতের মধ্য দিয়েই। তবে এবার দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের বিদায় এবং ২০২১ সালের আগমন ঘটেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটাই জানানো হয়েছে। দেশের উত্তর জনপদে শীতের প্রকোপ বাড়ছে।
ধীরে ধীরে কয়েকটি এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশায় দেখা মিলছে না সূর্যের। বহু এলাকায় সন্ধ্যা-প্রভাতে ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হাওয়ায় শীতের কাঁপুনি বেড়েছে। মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে গতকাল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল, নওগাঁ, দিনাজপুর, তেঁতুলিয়া, ডিমলা, রাজারহাট ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। শীতে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ-বালাই। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমশীতল বাতাসের কারণে কমছে না শীতের তীব্রতা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কর্মব্যস্ত জনজীবন। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের। কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন বলেন, উত্তরের কয়েকটি জায়গায় শীতের মৌসুমে বরাবরই তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। আরো দুয়েক দিন কয়েকটি জয়গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকবে হয়তো। এখন দেশের অধিকাংশ জায়গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থা কিছু দিন বহাল থেকে ফের একটু তাপমাত্রা কমতে পারে। জানুয়ারিতে তো সাধারণত শীতের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি থাকে। গত সপ্তাহ জুড়ে থেকে চলা শৈত্যপ্রবাহ মাঘ মাসের শুরুতে এসে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়েছে। দেশের বিশাল অঞ্চল জুড়ে এখন এই শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপ চলছে। পূর্বাভাস বলছে, পুরো জানুয়ারি জুড়েই থাকতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাউসার পারভীন বলেন, বর্তমানে দেশের ১২টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে সকালের কুয়াশা কাটিয়ে এরই মধ্যে রাজধানীতে রোদের দেখা মিলেছে। তিনি বলেন, যেহেতু কুয়াশা আছে তাই শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। আর একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে জানুয়ারি মাসে। আগামী দুই দিন রাতের তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমতে পারে। এর পর আবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, নদ-নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, আজ তাপমাত্রা পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। একইভাবে শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা ও বিস্তারও প্রায় একই থাকতে পারে। জানুয়ারির প্রথম কয়েক দিন তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি কমে যেতে পারে। তখন শীতের তীব্রতাও কিছুটা বাড়বে। এরপর পাঁচ-ছয় দিন আবার তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তখন দুই-একটি স্থান ছাড়া সব স্থান থেকেই শৈত্যপ্রবাহ দূরীভূত হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় পূর্বাভাসে অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
সেরা টিভি/আকিব