নিউজ ডেস্ক:
অবশেষে পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহাসিক ইছামতি নদীর দু’পাড়ের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শহরের ডিসি রোডের ছোট ব্রিজ থেকে নদীর চার কি. মি. পর্যন্ত উভয়পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা ও ঘরবাড়ি উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সময় কাঁচা-পাকা স্থাপনাগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উচ্ছেদ কার্যক্রমে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং নদীর দু’পাড়ে অবৈধ স্থাপনা যতদিন থাকবে ততদিন উচ্ছেদ অভিযান চলবে। এবারের অভিযান নদী সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ। পুরো প্রকল্পের জন্য ১২০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপির কাজ চলছে। ডিপিপির কাজ শেষ হলে পুরো প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।আজকের উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাল আবেদীন ও ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম। এ সময় পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী একএম জহুরুল হক উপস্থিত ছিলেন।
পাউবো জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সোমবার সারাদেশে দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধারের লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার থেকে নদীর দু’পাড়ের জায়গা খালি করার জন্য প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হয়। এতে সাড়া দিয়ে হাতেগোনা কয়েকজন স্থাপনা সরিয়ে নেন। কিন্তু অধিকাংশই তাদের স্থাপনা বৈধ বলে দাবি করেন। একই দাবিতে রোববার কয়েকশ এলাকাবাসী শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন।
জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা থেকে বেড়া উপজেলার হুরাসাগর পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঐতিহাসিক ইছামতি নদী। নদীকে ঘিরে পাবনা সমৃদ্ধ হয়। পাবনায় উৎপাদিত হোসিয়ারি এবং তাঁত পণ্যসহ আন্যান্য সামগ্রী বড় বড় জাহাজে দেশের বাইরে রফতানি হত। চলাচল করত স্টিমার। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নদীতে তার পানসীতে চড়ে ভেসে বেড়াতেন। ইছামতি নদী নিয়ে তিনি লিখেছেন একাধিক কবিতা। জায়গা বিশেষে ১৮০-১৮৫ ফুট প্রশস্ত নদী এখন দখলদারদের কারণে ১০০ ফুট প্রশস্ততায় পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি ইছামতি নদী ছিল। বিশেষ করে পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর আট কিলোমিটার দখল এবং ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পাবনাবাসী দীর্ঘদিন ধরে নদী উদ্ধার এবং দখল-দূষণমুক্ত করে একে আগের মতো প্রবাহমান করতে আন্দোলন করে আসছে।
এরই ধারাবাকিতায় এরশাদ সরাকারের আমল থেকে এখন পর্যন্ত সব সরকারের আমলেই ইছামতি নদী সংস্কার এবং দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়। টাকাও বরাদ্দ হয়। কিন্তু পরিকল্পনার পরি উড়ে যায়, কল্পনা পড়ে থাকে। মাঝখানে লাভবান হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার।
২০০৩ সালে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয়ে একটি জরিপ করা হয়। এতে পাবনা শহরের মধ্যে ২৮৫ জন দখলদার চিহ্নিত হয়। এরপর সর্বশেষ ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬০০ দখলদার চিহ্নিত করা হয়।
শনিবার উচ্ছেদ চলাকালে অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে এবং ঐতিহাসিক ইছামতি নদী প্রবাহমান করার দাবিতে নদীর পাড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ‘ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন’।
মানববন্ধনে অংশ নেন- পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিয়ুর রহমান, পাবনা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহাতাব উদ্দিন বিশ্বাস, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের সভাপতি মোশারোফ হোসেন ও ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলনের সভাপতি এসএম মাহবুব আলম প্রমুখ।
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, সারাদেশে নদী উদ্ধারে সরকার বদ্ধপরিকর। ঢাকায় নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাবনাতেও হবে। নদীকে দখলমুক্ত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হবে। ইছামতি নদী দখলমুক্ত ও সংস্কারের এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। এজন্য পাবনাবাসীকে সহযোগিতার আহ্বান জানাই।
পাবনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম জহুরুল হক বলেন, নদীর দখলমুক্ত করে সংস্কার করার একটি বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। এজন্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তার আগে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৩ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে পাবনার ইছামতি নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। নদী দখলমুক্ত করতে যখন প্রয়োজন তখনই অভিযান চলবে।
সেরা নিউজ/আকিব