নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে এরিক অ্যাডামসকে সমর্থন জানিয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান পেশাদারদের দল ‘রাইজ আপ নিউইয়র্ক’। গত ২৫ এপ্রিল মিনি বাংলাদেশখ্যাত জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজাতে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করেও প্রায় ৮০ জন সদস্য এই বৈঠকে অংশ নিয়ে এরিক অ্যাডামসকে সমর্থন জানান।
রাইজ আপ নিউইয়র্কের সদস্যরা মেয়র প্রার্থী অ্যাডামসের সাথে ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন সময়ে জনপ্রিয় কনফারেন্সিং সফটওয়্যার জুমের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হওয়ার পরে এই সমর্থনটি আসে। উপস্থিত জনগণ তাঁর জননিরাপত্তা সুরক্ষা, অর্থনৈতিক, শিক্ষামূলক এবং আবাসন নীতিগুলিতে সন্তুষ্ট হয়েছেন।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করা এরিক অ্যাডামস পড়াশোনা করেন নিউইয়র্কের পাবলিক স্কুলে। সাধারণ পরিবারে বড় হয়ে ওঠা এরিক মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন এবং স্বীয় যোগ্যতাবলে ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। এনওয়াইপিডি থেকে অবসর গ্রহণের পরে তিনি ব্রুকলিনের রাজ্য সিনেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৩ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি ব্রুকলিন বরো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে জনগনের জন্য কাজ করে যাওয়া এরিক অ্যাডামস মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে ব্যক্তিগত এবং সার্বজনিন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বিভিন্ন মসজিদে জুমআর নামাজের সময় বক্তব্য রেখেছিলেন। ফলে হাজার হাজার বাংলাদেশির এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা এবং সখ্যতা গড়ে ওঠে। ফলে স্বাভাবিক কারনেই কমিউনিটি নেতারা মেয়র পদে এরিক অ্যাডামসকে সমর্থন জানান।
এ ব্যাপারে রাইজ আপ নিউইয়র্কের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা শামসুল হক বলেছেন, “মিঃ অ্যাডামস অসাধারণ প্রতিভাবান নেতা, অভিজ্ঞ এবং একজন সত্যিকারের নিউ ইয়র্কার। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং নিউ ইয়র্ক সিটিকে সুরক্ষিত রাখতে তাঁর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। ” তার বক্তব্যকালে, জনাব হক যখন “আমার ভাই তোমার ভাই” উচ্চারণ করলেন, তখন জনতা “এরিক ভাই, এরিক ভাই” নিয়ে গর্জে উঠলো।
কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অ্যাডামস বলেন তিনি “আমি আপনাদের নতুন বন্ধু নই, আমি বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের একজন “পুরানো বন্ধু। তিনি বলেন “আমাদের শহরটি একটি মহামারীর মধ্যে রয়েছে যা সত্যই আমাদেরকে ছড়িয়ে দিচ্ছে অসমতার গভীরতা উন্মোচিত করেছে। অ্যাডামস আরও বলেন নিউইয়র্ক সিটিতে গোলাগুলির ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে এবং লোকেরা ঘরে বা রাস্তায় নিরাপদ বোধ করে না।
তিনি বলেন ‘আমরা অপরাধ ছড়িয়ে পড়তে দিতে পারি না এবং আমি নিরাপদ নিউ ইয়র্কের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেব।
বৈঠকে প্রাক্তন কংগ্রেসনাল প্রার্থী এবং ব্যবসায়ী মিজানুর চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, “জননিরাপত্তা সকল নিউ ইয়র্কারের কাছেই সর্বোচ্চ।” জননিরাপত্তা ছাড়াও সত্যিকারের সুরক্ষা একটি অর্থনৈতিক বিষয়। সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, ভাল পাবলিক স্কুল, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং ভাল বেতনের চাকরিতে সত্যিকারের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করনের আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত খায়রুল ইসলাম (কুকন) বলেছিলেন, “আমাদের এমন একজন মেয়র দরকার যিনি কীভাবে বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়, যিনি এনওয়াইসির মতো একটি মহান শহরের প্রয়োজন সমস্ত পরিষেবা প্রদানের জরুরিতা বোঝেন এবং শ্রমজীবী পরিবারগুলির চাহিদা বোঝেন।”
মিঃ অ্যাডামস একমাত্র প্রার্থী নন যিনি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রচার চালাচ্ছেন। সম্প্রতি স্কট স্ট্রিংগার, অ্যান্ড্রু ইয়াং এবং রেমন্ড ম্যাকগুইয়ার সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
সম্প্রদায়ের নেতা ও ব্যবসায়ী মিঃ শাহ নেওয়াজ তার বক্তব্যে বলেন, “এরিক বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের একজন পুরানো বন্ধু।” তাকে নির্বাচিত করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাব।
এব্যাপারে মিঃ জুহাইব চৌধুরী বলেন এই নির্বাচন সহজ কোনো নির্বাচন নয়। যেহেতু অনেক নিউ ইয়র্কার প্রাথমিক নির্বাচনে ভোট দেয় না, তাই “কেবল কয়েক হাজার ভোটই নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে। একটি বিখ্যাত উক্তিটির পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন: “বাংলা আজ যা ভাবছে, বিশ্ব তা কালকে ভাববে। তিনি ২২ শে জুন সকল বাংলাদেশিকে এরিক অ্যাডামসকে ভোট দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেন।
অনুবাদ: আকিব মাহমুদ